ঘুরে আসুন বিমান বাহিনী জাদুঘরে
ফারজানা ওয়াহিদ
আমরা যারা ঢাকায় বসবাস করছি তারা খুব একটা বাইরে বেড়াতে যেতে চাই না। কারণ এই শহরের ব্যস্ততা আর জ্যাম মানুষকে যেন সেই সুযোগই দেয় না। আমরা খুজে পায়েছি এমন একটি জায়গা যেখান থেকে জানা যাবে বাংলাদেশের বিমান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। ছুটির দিনে, বিকালে বা অবসর সময় কাটানোর জন্য এই জায়গার তুলনা হয় না।
রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দরের পশ্চিম রানওয়েতে (আইডিবি ভবনের বিপরীত পাশে) স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম বিমান জাদুঘর। উড়োজাহাজে ওড়ার স্বপ্ন সব মানুষের। কিন্তু কয়জনে উড়োজাহাজে উড়তে পারে বলুন। কাছ থেকে যুদ্ধ বিমান বিমান জাদুঘরে এসে এই ইচ্ছা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রসারে তৈরি হয়ছে এই জাদুঘর। বিমান বাহিনীর পুরাতন বিমান, হেলিকপ্টার নিয়ে তৈরি হয়েছে এই জাদুঘর। প্রায় প্রাতিদিন বিকালে ভিড় লেগেই থাকে এই জাদুঘরে। আসুন জেনে নেই এই ব্যতিক্রমধর্মী জাদুঘরের কথা।
টিকিট কাউন্টার অতিক্রম করলেই চোখে পড়বে `নীলাদ্রি নামের একটি দোকান`। এই দোকানে পাওয়া যাবে বিমানবাহিনীর স্মারক সহ আরও অনেক কিছু। দোকান থেকে একটু সামনে গেলে চোখে পড়বে একটি মানচিত্র। সমগ্র জাদুঘরে কী আছে না আছে, তা এই মানচিত্র থেকে ধারণা পাওয়া যাবে। এরপরে জাদুঘরটির ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে এক বিশাল চত্বর। পুরো চত্বর জুড়েই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবের সাক্ষী হয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গি বিমান, হেলিকপ্টার ও রাডার। এখানে মোট ১৯টি বিমান এবং ৩ টি রাডার রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি বিমান বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহার হয়েছিল। বিমান বাহিনীর প্রথম বিমান “বলাকা”ও রয়েছে এই জাদুঘরে। এমনকি বলাকার ভিতরে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। যার জন্য দর্শনার্থীকে খরচ করতে হবে মাত্র ৩০ টাকা।
ঈগল চত্বর অতিক্রম করে আরেকটু এগিয়ে গেলেই বিশাল এক যন্ত্রের সাথে দেখা হবে আপনার। যার নাম জিসিএ-৭১১ রাডার। প্রতিকূল আবহাওয়াতে বিমানকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সুদূর চীন থেকে আনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এরপর সামনে পড়বে যাবেন বিশাল এমআই-৮ হেলিকাপ্টারের। মাত্র ৩০ টাকায় উঠতে পারবেন এই হেলিকপ্টারে। রাশিয়ার তৈরি এই হেলিকাপ্টারটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। জাদুঘরে ঢুকতেই ডানদিকে আছে শিশুদের জন্য চাইল্ড কর্নার। বিভিন্ন রকমের খেলার জিনিসে সজ্জিত এই কর্নারটি। চাইল্ড কর্নারের পাশাপাশি রয়েছে জিরাফ, শিম্পাঞ্জি, হরিণ ইত্যাদি নানা রকম পশু-পাখির প্রতিকৃতি। যার নাম দেওয়া আছে ‘চিলড্রেন হেভেন’। এছাড়া রয়েছে পানির ফোয়ারা ও পাহাড়ের আদলে একটি ‘থিম পার্ক’। ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধা লেগে গেলে আছে ক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থা। স্কাই মেন্যু নামে রয়েছে একটি খাবারের দোকান। আসুন এক নজরে জেনে নেই জাদুঘরে প্রদর্শিত কিছু বিমানসমূহের নাম ও বর্ণনাঃ
বলাকা: বাংলাদেশের প্রথম বিমানের নাম বলাকা। ১৯৫৮ সালে রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটি প্রথম বাংলাদেশে আসে।
হান্টার বিমান: মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে এই বিমানটি উপহার দিয়ে থাকে। যা মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়েছিল।
এফ-৮৬: স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বিমানটি ব্যবহার করে। এটিরও দেখা মিলবে বিমান জাদুঘরে।
এফটি-৫: ১৯৮৬ সালে চীনের তৈরি এই বিমানটি প্রথম বাংলাদেশে আসে।
পিটি-৬: লাল সাদা এই বিমানটি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্ত হয়।
এয়ার টুওরার: ট্রেনিং এর কাজে ব্যবহৃত হওয়া নিউজিল্যান্ড থেকে আগত এই বিমানটি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে বিমান বাহিনীতে যুক্ত হয়।
মিগ-২১: ১৯৭৩ সালে রাশিয়া উপহার স্বরূপ এই বিমানটি বাংলাদেশকে দিয়ে থাকে।
গ্লাইডার: পশ্চিম জার্মানির তৈরি এই বিমানটি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে আনা হয়ে থাকে।
এয়ারটেক কানাডিয়ান ডিএইচ ৩/১০০০: ১৯৭১ সালে কানাডার তৈরি এই বোমারু বিমানটি চট্টগ্রাম সুমদ্র বন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করে। এখন এটি বিমান জাদুঘরে রাখা হয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে জি নাট, এফ৬, এ৫-১১১, অটার-৭২১ বিমান, এফটি-৫ বিমান, ফুগাসি এম-১৭০ নামে আরও অনেক বিমান এবং হেলিকপ্টার দেখতে পাওয়া যায় এই বিমান জাদুঘরে।
রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এছাড়া সোম থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
প্রতিক্ষন/এডমি/এফজে